২০২৫ সালে আগাখান অ্যাওয়ার্ড পেলো খুদিবাড়ি। বিশ্বজনীন সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক উপায় ব্যবহার করে, খুদিবাড়ি নকশা করা হয়েছে। মেরিনা তাবাস্সুম আর্কিটেক্টস (MTA ) নিজ উদ্যোগে ভূমি অধিকার নিয়ে গবেষণা করার সময়, ২০১৮ সালে কৃষক সমাজের সংস্পর্শে আসে, তখনই একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং নিজেই নির্মাণ করা যায় এমন আবাসন নকশার চিন্তা করে Iযা পরবর্তীতে চরে বসবাসরত মানুষের সাথে মিলেমিশে কমিউনিটি ম্যাপিং এবং ডিজাইন কর্মশালার মাধ্যমে দলগতভাবে চাহিদা নিরুপন গ্রাহক নির্ধারণ ও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
মাত্র ৪৫০ ডলারে নির্মিত খুদিবাড়ি একটি সাশ্রয়ী বাঁশের ঘর, যা বিশেষ স্টিল সংযোগে তৈরি ও বন্যা-সহনশীল। দুইতল এই কাঠামোর উপরের অংশ বন্যার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার ও আশ্রয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ছাদে টেকসই ঢেউটিন ব্যবহার করা হয়েছে। উপরের অংশে কাঠের ফ্রেমের প্যানেল আছে, আর নিচের দেয়াল মালিকরা নিজের মতো করে বানায়। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন সহজলোভ উপকরণ ব্যবহার করতে পারে। ফলে একই মডিউল থাকলেও বস্তু ভিন্ন উপকরণ, ক্ষমতা, ইচ্ছার ও সহজলোভ্যতার ভিত্তিতে ব্যবহার করে। ফলে খুদিবাড়ি বিভিন্ন রূপ পায়, যা গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘরে স্বাভাবিকভাবে প্রতিফলিত হওয়ার মতো।
মাঠপর্যায় নকশাগুলোকে প্রতন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ফাউন্ডেশন ফর আর্কিটেকচার এন্ড কমিউনিটি ইকুইটি (FACE) নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এই পর্যন্ত ৭৮টির বেশি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই খুদেবাড়িগুলো সহজেই তৈরি ও সরানো যায়। মালিকরা বলছেন, এগুলো মাত্র তিন দিনের মধ্যে তৈরি এবং তিন ঘণ্টার মধ্যে ভাঙা সম্ভব। খুদিবাড়ি ইতিমধ্যেই বন্যা বা নতুন স্থানে স্থানান্তরের ঝুঁকি সামলাতে সক্ষম হয়েছে।
MTA বাংলাদেশের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুদিবাড়ি মডিউলার সিস্টেম ব্যবহার করে নারী-নেতৃত্বাধীন এবং নারী-কেন্দ্রিক কমিউনিটি সুবিধা তৈরী করে। এটি মডুলার সিস্টেমের ব্যবহার ও সম্প্রসারণের একটি সফল উদাহরণ।
বাংলাদেশে সহজে পাওয়া যায় এমন বাঁশকে চর এলাকায় সাধারণত ২৪ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাঁশকে ছত্রাক ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য বোরাক্স ও বোরিক অ্যাসিড দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) তৈরি বিশেষ স্থানে করা হয়।
আগাখান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার জুরির মতে- "খুদিবাড়ি প্রকল্পটি বড় কমিউনিটি প্রকল্পে পরিণত হলেও তার সরল কাঠামো ও সৌন্দর্য বজায় রাখে। এটি ব্যক্তিগত আশ্রয় থেকে শুরু করে শ্রেণিকক্ষ, কমিউনিটি কিচেন এবং মানবিক সহায়তা কেন্দ্রের মতো সামাজিক অবকাঠামো পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব, বাঁশকে টেকসই এবং ব্যবহারযোগ্য উপকরণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচারে সহায়ক, যা কেবল স্টাইল নয়, বাস্তব ও টেকসই মান দেয়।“
পৃথিবীর কঠিন সময়ে খুদিবাড়ি আশা যোগায় যে স্থাপত্য সহজ এবং মানুষ-কেন্দ্রিক সমাধন দিতে পারে যা একইসাথে টেকসই, সাশ্রয়ী এবং দেশীয় মেটেরিয়াল ব্যবহার করে। খুদিবাড়ি একটা সাশ্রয়ী বাড়ি বানানোর প্রযুক্তি ও মানুষের সাথে মিলেমিশে আবাসন প্রক্রিয়া ডিজাইনের সমন্বয়।
উল্লেখযোগ্য,২০১৬ সালে বায়তুর রউফ মসজিদের জন্য মেরিনা তাবাস্সুম আর্কিটেক্টস আগাখান পুরস্কার (Aga Khan Award) পেয়েছিলেন।
খুদি বাড়ি ছাড়াও এ বছর আরও ছয়টি প্রকল্প পুরস্কৃত হয়েছে:
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের বিশকেক শহরের Toktogul Satylganov Kyrgyz National Philharmonic-এ।
Photo credits in no particular order: City Syntax, Arinjoy Sen, Julia Lanoo and collected.
More News Like This